নেমন্তন্নের রূপান্তর ~ ডঃ অরুণ চক্রবর্তী | Nemontoner Rupantor (bangla kobita) - by Dr. Arun Chakraborty

নেমন্তন্নের রূপান্তর 

                               ~ ডঃ অরুণ চক্রবর্তী



হই হই বিয়ে বাড়ী, 
বিসমিল্লার সানাই বাজে প্যাঁ....প্যাঁ.....প্যাঁ.....পুঁউউউ,
কতো না আড়ম্বর; লোকজন, খাওয়া দাওয়া, 
চলে শুধু দিনভর।
ভিয়েন বসেছে, রাঁধে সাত উড়ে বামুনে! 
ছাঁকা তেলে, ফ্রাই হয়, মাছের সাথে পণীর 
আর বোঁটাওয়ালা বেগুনের!
কর্তা ঘুরে ঘুরে,যায় দেখে, 
মাঝে মাঝে, ফুলছে কি? 
নুচি ও কচুরী, কড়াই শুটি, তেল গিয়ে খাঁজে খাঁজে!মাংসের কিমা নিয়ে কত না সর্দারী, 
বেরিয়ে আসছে; চপ আর ডেভিলের, জড়াজড়ি, 
এদিকে খাসীর মাংস কষা আর ভেটকীর পাতুরী।
আছে দেশী ঘিয়ে ডোবা, কাজু কিসমিস ভরা শাহী পোলাও, 
চালটা যে দেরাদুনী!
লোভী চোখে চেয়ে থাকি, চেখে দেখব নাকি! 
গরম রসের মাঝে হীপোপটেমাস যেন, 
মৃত্যুর শংকায়, ভাসে এলাচে জাফরানি লেডীকেনি! 
আরে! ওটা কি? ওখানে? 
রসগোল্লা, কালাকাঁদ, সন্দেশ, মিষ্টির ভীড়ের মাঝে, 
মিহিদানা, মালপোয়া, মুখ তোলে কোনমতে, 
যেন সুমো পালোয়ান! 
তাকিয়ে, লাল দই ও শর্মার রাবড়ি। 
এসো ছুটে এসো, জুটে এসো, 
ফুরিয়ে যাবার আগে, বসি প্রথম পাতে, 
এরই নাম বিয়েবাড়ী। 
এ ছিলো আমাদের দেখা পুরাতন বিয়ে বাড়ী।

দেখা যাক, রুপান্তরে কি হয়!
একালের বিয়েবাড়ী, বাজেটের কড়াকড়ি! 
ছিমছাম্, ফুলের গেট, 
বাইরে অনেক গাড়ী! 
ঢুকছে, বেরুচ্ছে আত্মীয়,অতিথী, 
রেকর্ডে বাজে সানাই, 
বিসমিল্লারা আজ আর নাই, 
রেটে পোষাবেনা তাই! দেঁতো হেঁসে, আসেন এগিয়ে, বলেন কর্তা, নিজের মনে করে, খাবেন মানিয়ে,
করেছে ক্যাটারিং বালিগঞ্জ69, 
প্লেট পড়েছে টাকা 3000 মাথা পিছু! 
হলে গিয়ে দেখি! গোলাপের খুশবু! সুবেশা তরুণী কতো, 
হাঁসি মুখে তুলে দেয় গোলাপের কুঁড়ি।
বাবুর্চিরা এগিয়ে দেয়, ওডিকোলোনে চোবানো 
সুগন্ধি, স্টীম, হাত তোয়ালে! 
ঘষি আমি গালে, ঘাড়ে, কপালে। 
মেনু কার্ড, লাগলো মনে সাদাসিধে, 
প্রথম পড়লে প্লেটে, ফিশ্ ফ্রাই সঙ্গে রাই! 
চমৎকার, জীভে জলে একাকার!! 
আরেকটা রিপিটে, বলে দিচ্ছি, দিচ্ছি, ওরে বাবা!
এতো, খাওয়া নয়! যেন শুরু হলো, Rapid Fire রাউন্ডের খেলা! 
এ্যাসেম্বলী লাইনে বেয়ারা, বাবুর্চি, 
চাওয়া পাওয়া থাকতে নেই, মনে রাখবেন, এটা ক্যাটারিং! গুনে গুনে দেখি! একটা রিপিট আর টাচ্ এন্ড গো সবই। মটরশুঁটির কচুরী মনে হয়, সাইজ লিটটি বিহারী!
লাল কাশ্মীরি আলুর দম্, হতে না শেষ, 
এলো গলদা চিংড়ির ফ্রাই, 
নিজের অজান্তেই দেখি, এসেছেন, 
কলাবতীরোগা ভেটকির পাতুরী, চাইব কি আর! 
নাচছে আপনা হতেই রেওয়াজী মাটন বিরীয়ানী! 
দয়ার দান! লজ্জায় চাইলুম, দিলে ওরা একটু;
মাঝে হলো বিস্তর মুখ চাওয়া চাওয়ি; 
এরই মাঝে, ফিরে এলো ফিশ ফ্রাই, 
অপেক্ষার অভিমানে খেলাম তাই। 
দুমদাম এসে গেলো, যেন আলাদীনের প্রদীপ দৈত্য, নিমেষে, ছানার পায়েস, নলেনগুড়ের ঘটি সন্দেশ, বরফকল থেকে আনা খাঁটি ষোল আনা কেশরপেস্তার সুন্দর কুলফী, নির্লজ্জের লজ্জা শেষ, জোর করে দখল নিলাম, রুপোলী রাংতায় মোড়া, 
দুটি পান বেনারসী।।

(REGISTERED UNDER COPYRIGHT ACT, 1976)


🌺🌺 সবাই জানাবেন লেখা কেমন লাগলো?🙂🙂 🌻🌻 লেখা ভালো লাগলে লাইক করুন আর নিজের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন 🙏🌹 💐🙏ধন্যবাদ 🙏🌼।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন