প্রথম জামাই ষষ্ঠী
~ অনাদি মুখার্জি
মালা অন্য দিনের তুলনায় আজ খুব ভোরে সেই উঠে পড়েছে ! কত কাজ আছে, তার উপর আজ আবার জামাই ষষ্ঠী ! তার এক মাত্র জামাই বাবা তার কাছে ষষ্ঠীর ফোঁটা নিতে আসছে , তাই মায়া আজ খুবই ব্যাস্ত ! সমস্ত বিছানা ছেড়ে ,ঘর পরিষ্কার করে ,ডাইনিং টেবিলের উপর টা ভালো করে ছেড়ে সাজিয়ে একদম রেডি করে ফেললো ! সকালের মেনু কি হবে এইসব ভাবতে ভাবতে তার মনে পড়ে গেল , তাদের একমাত্র মেয়ে সোমার খুব ঘটা করে বিয়ে দিয়েছে একজন নাম করা বিজেন্সম্যান বিজয়ের সাথে ! বিয়ে পর তারা দুই জনে একবার ই এসেছিল সেই অস্টমঙ্গলা করতে ! বিজয় খুব লুচি আর পনিরের তরকারি খুব খেতে ভালোবাসে সেই দিন জানতে পেরেছিলো তার মেয়ের কাছে ! এই ভেবে রান্নার ঘরে পা দিতে দরজায় কলিং বেলের আওয়াজ আসলো , মনে হল মেয়ে ও জামাই চলে এসেছে ,দরজার খুলতেই দেখে ,তার মেয়ে ও জামাই হাজির ! আজ খুব সুন্দর লাগছে সোমা কে ,জামাই খুব হ্যান্ডসাম লাগছে ! মালার হঠাৎ নজর গেলো , জামাই হাতে করে এক ভাড় মিষ্টি ও একটা বড়ো ইলিশ মাছ এনেছে ! তা দেখে মালা তার মেয়ে সোমা কে বললো তুই এত সব জামাই বাবাজি কে আনতে বললি ? জামাই বিজয় তখন তার শাশুড়ি মা মালা কে প্রণাম করে বললো ,মা কি আর আনলাম আপনার জন্য কৃষ্ণনগর থেকে বিখ্যাত রাবড়ি আর মাছ বলে শাশুড়ি মায়ের হাতে দিল ! মালা ও সাত তাড়াতাড়ি ধরে বললো ,এসো বাবা ভেতরে এসো , সেই খুব সকালে বের হয়েছো কিছুই খাওয়া হয়নি ,বলে তার মেয়ে সোমা কে বললো তুই একবার রান্না ঘরের এসো আমার সাথে ! মালার আজ প্রথম জামাই ষষ্ঠী পালন করছে !
জল খাবার খেতে বিজয় বললো সত্যিই মা আপনি দারুণ রান্না করেছেন ,পনিরের তরকারি তে এতটুকু ঝাল নেই , এই কথা শুনে মালা বললো আর কি ওই একরকম হয়েছে বাবা ! তার পর মেয়ে ও জামাই কে বিশ্রাম নিতে বলে চলে গেলো আবার রান্নার ঘরে দুপুরের খাবার করতে !
কিছু বাদে তার মেয়ে সোমা এসে তার মা কে সাহায্য করতে লাগলো ,মা ও মেয়ে গল্প করতে করতে রানা করতে লাগলো ! রান্না শেষ হবার পর মালা তার মেয়ে কে বললো যা মা তুই আর জামাই ডাইনিং হলে গিয়ে বস আমি আসছি !
মালা ডাইনিং হলে এসে দেখে মেয়ে ও জামাই ও তার বর বসে আছে !
মালা তার জামাই ও মেয়ে কে ষষ্ঠী ফোঁটা দিয়ে জামাইয়ের মুখে মিষ্টি ও জল খায়িয়ে দিল ! তার পর মেয়ে ও জামাই কে নতুন বস্ত্র দিল , জামাই ও মেয়ে তার বাবা ও মা কে প্রণাম করে নতুন কাপড় দিল !
কিছুক্ষণ পরে ডাইনিং টেবিল ভর্তি খাবার এলো , এত খাবার দেখে বিজয় অবাক হয় !
ফ্রাইড রাইস , ইলিশ মাছ ভাজা ,ছানার ডাল ,বাটার ও পনির দিয়ে মাখোমাখো করে হালকা ঝোল ,কচি পাঠার মাংস , পাঁপড় ,খেজুরের চাটনি ,স্যালেড ! এত খাবার দেখে বিজয় বলে মা আমি এত খাবার খেতে পারবো না ! সাথেই সাথে মালা বলে না বাবা ওই কথা বলো না ,আজ জামাই ষষ্ঠী সব খেতে হবে ! বিজয় ও সোমা সব খাবার চেটেপুটে খেয়ে বললো ,সত্যিই মা আপনার হাতের রান্না ঠিক আমার মায়ের মতোন ,তাই সব খাবার খেলাম ! বিজয় মুখে এই কথা শুনে মালা খুবই খুঁশি হলো ! মনের মধ্যেই একটা চিন্তা ছিল তার প্রথম জামাই ষষ্ঠী সেই কি পারবে জামাই কে খুঁশি করতে ,খাওয়ার শেষে জামাই বাবাজি হাত ধূয়ে নিজে খেতে গেল !