অশরীরির সাহায্য
~✍️ রীতা বসু
আমার জন্মেরও আগের কথা। বড় হয়ে শুনে ছিলাম মার মুখে। স্তম্ভিত হয়ে গেছিলাম। ভাবছিলাম, বাবার ভাগ্যে কেন বারবার এমন অলৌকিক ঘটনা ঘটে?
১৯৫৮ সাল।বাবার অফিসে খবর এল আমাদের পিসতুতো দাদা পাড়ায় ক্রিকেট খেলতে গিয়ে মাথায় ডিউজ বল লেগে সাংঘাতিক চোট পেয়ে ছে। ইন্টারনাল হেমারেজ হয়ে কল্যাণীতে জহরলাল হসপিটালে তাকে ভর্তি করা হয়ে ছে। ওরা থাকতো রাণাঘাটে।কিন্তু রাণাঘাটের হসপিটালে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় ওখান থেকে কল্যাণী হসপিটালে ওনারা রেফার করে দিলেন ।
আমার বাবার প্রাণের চেয়ে ও প্রিয় ছিল তাঁর বোনপো রা।বাবা আগে ছুটতে ছুটতে বাড়িতে এলেন।এসে মাকে সব কথা খুলে বলতেই মা বাবাকে তখনই কল্যাণী যাবার পরামর্শ দিলেন।বাবাও আর সময় নষ্ট না করে শিয়াল দহ গিয়ে ট্রেনে চড়ে বসলেন।
তখন সন্ধে হয়ে গেছে। তারপর বৃষ্টি শুরু হয়ে ছে টিপটিপ করে। অফিস ফেরত মফস্বলের যাএীতে ট্রেন বোঝাই।মাঝে মাঝে ট্রেন থামছে, সিগনাল না পেয়ে। আর বাবা ততই ছটফট করছেন। খালি ভাবছেন,পার্থকে জীবিত দেখতে পাবেন তো?চোখ বুজে ঈশ্বর কে ডাকতে ডাকতে চলেছে ন।
ঘ্যাঁস। ট্রেন দাঁড়িয়ে পড়ল নৈহাটি তে।বাবা জানলা দিয়ে মুখ বাড়ালেন চা খাবার জন্য। মাথা টা দপদপ করছে।ওদিকে হঠাৎ কে দাঁড়িয়ে আছে পল্যাটফর্মে? পার্থনা?হ্যাঁ,পার্থই তো।হাতে ছাতা নিয়ে কাকে যেন খুঁজছে কামরা র মধ্যে!
বাবা দিগবিদিক বোধশূণ্য হয়ে গাড়ি থেকে নেমে ছোড়দার দিকে এগিয়ে গেলেন।কিন্তু কই সে? তন্ন তন্ন করে খুঁজে ও তাকে পাওয়া গেল না।বাবা তো খুব ই বিচলিত আর বিধ্বস্ত হয়ে পড়লেন।ভাবলেন, কোন ফেক খবর কেউ দিয়ে ছি ল তাঁকে।কিনতু না! খবরটা তো তাঁকে দিয়ে ছিল পিসেমশায় নিজে,হাউহাউ করে কাঁদতে কাঁদতে।
কি এক মানসিক অবর্ণনীয় পরিস্থিতি! এদিকে চোখের সামনে দিয়ে হূসহূস করতে করতে ট্রেন টা বেরিয়ে গেল।বাবা ট্রেন মিস করলেন।
পরের ট্রেন আধঘন্টা পরে। ভিড়ে ঠাসা স্টেশনে অবসন্ন, ক্লান্ত মানুষ টি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি লেন না।একই কথা ভেবে চলে ছেন,"আমি কি এতটা ভুল দেখলাম! পার্থর মত তাগড়া জোয়ান কোন ছেলেকে দেখেই নেমে পড়লাম আর ট্রেন টা মিস করে ফেললাম। ওই ভুল না করলে এতক্ষণে হালিসহর আর কাঁচরাপাড়া পেরিয়ে কল্যাণীতে ঢুকে পড়তাম!দূর! কি যে হল!"
এইবার শেষ চমক!হঠাৎ মাইকে ঘোষণা হল আগের ট্রেন টি কাঁচড়া পাড়ায় ঢোকার মুখে বিরাট দুর্ঘটনায় পড়ে ছে।পিছন থেকে একটি মালগাড়ি এসে এমন ধাক্কা দিয়ে ছে যে শেষ দুটি কামরা একেবারে ছিন্ন ভিন্ন, কেউ বেঁচে নেই, আর আসল কথা কি, বাবা ছিলেন শেষের কামরার আগে রটিতে। সম্পূর্ণ ঘটনা টা অনুধাবন করতে ই বাবা চেতনা হারালেন। যখন সুস্থ হলেন,তখন অনেক রাত।লাস্ট ট্রেনে কল্যাণী পৌঁছে জানতে পারলেন,পার্থ মুখার্জি র মৃত্যু হয়েছে ৭.২৩ মিনিটে, আর বাবা নৈহাটি তে পৌঁছে ছিলেন ৭.২৫ মিনিটে।
তাহলে কি ছোড়দা এসেই কায়দা করে বাবা কে বাঁচিয়ে দিয়ে গেল?কতজনে কত কথা বলে? বিজ্ঞান মনস্ক রা বলেন,এটা কাকতালীয়, আর আমরা , সাধারণ মানুষ রা ভাবি ছোড়দা এসে বাবাকে বাঁচিয়ে গিয়ে ছিল।
=================================
Tags:
Kahini/কাহিনী