ধর্ষকের প্রতিশোধ
~ শংকর হালদার
প্রচন্ড গরমের এক রাতের আটটার সময়ে, ঘরের মধ্যে একবার পুরুষ কন্ঠের আর্তনাদেরচিৎকার করার পর বিছানা ও ঘরের মেঝেতে রক্তে রঞ্জিত হয়ে পড়ে। একজন পুরুষ ভয়ে
আতঙ্কে পালানোর চেষ্টা করে-দৌড়াতে দৌড়াতে বাড়ীর সদর দরজার লোহার গেটের
সামনে এসে , দুই হাত দিয়ে গেট ধরে জোরে জোরে ধাক্কাধাক্কি করতে শুরু করে এবং
পিছনের দিকে তাকাতে তাকাতে চিৎকার করে বলে :- বন্ধু নরেশ দরজা খুলে দে, তোর বৌ
মেরে ফেলবে। তোকে মদ পান করিয়ে দশ হাজার টাকা হাতে ধরিয়ে দিয়ে- তোর বউ কে
ধর্ষণ করতে গিয়েছিলাম। বন্ধু গেট খুলে-আমাকে বাঁচাতে দে, আরো অনেক টাকা দেবো।
লীলাবতী বিবস্ত্র হয়ে খড়গ না পেয়ে , সবজি কাটার বোটি হাতে নিয়ে
উর্দ্ধেশ্বরে দৌড়াতে দৌড়াতে গেটের সামনে এসে গাঁয়ের জোরে ঝারা কোপ মারে-সেই
মুহূর্তে গেট খুলে যায় এবং আরেক বার আর্তনাদ চিৎকার করে উঠে , গেটের মাঝে
লুটিয়ে পড়ে দেহ থেকে মাথা।
লীলাবতী মনের আনন্দে উলঙ্গ শরীরে দুই হাত দিয়ে রক্ত মাখতে শুরু করে , সেই
মুহূর্তে একটি পুরুষ পালানোর চেষ্টা করে।
লীলাবতী বোটি ছুড়ে মারে আর উক্ত পুরুষ টি পড়ে যায়।
লীলাবতী মনের আনন্দে আত্মহারা হয়ে রক্তের হোলি খেলা করে- এক হাতে একটি কাঁটা
মুন্ডু ও অন্য হাতে বলি দেওয়ার খড়গ নামক বোটি নিয়ে হাঁটতে শুরু করে,একে একে
ঘটনাস্থলে জমায়েত হওয়া- কয়েক এক শত নারী-পুরুষের মধ্যে দিয়ে।
ভয়ে আতঙ্কে কোন নারীরা লীলাবতীর পথ অবরোধ করে না এবং গতি থামানোর কোন চেষ্টা
করে না।
কিন্তু নানা জন নানা ধরনের বাজে বাজে মন্তব্য করতে ছেড়ে দেয়নি।
বেশ্যা,কুলটা, বাজে মেয়ে ও ঘরে স্বামী থাকতে অন্য পুরুষদের ঘরে নিয়ে আসে।
স্বামী হয়তো, দেখে ফেলেছিল পরকীয়া প্রেমের লীলা-সেই কারণেই খুন করে
চিরেদিনের মতো নিস্তব্ধ করে দিলে।
আরো কত কিছু , মানুষ জন কথাবার্তা বলতে বলতে লীলাবতীর বাবা-মা কে গালিগালাজ
দিতে শুরু করে।
বিশেষ করে মহিলারা এই বিষয়ে বিশাল পারদর্শী।
লীলাবতী দৌড়াতে দৌড়াতে সোজা থানার মধ্যে ঢুকে যায়। থানার নিরাপত্তা রক্ষী
পুলিশ দৃশ্য দেখে ভয় পেয়ে ছুটতে ছুটতে থানার ভিতর ঢুকে পড়ে।
লীলাবতী থানার অফিস ঘরে ঢুকে বড় লম্বা টেবিলের উপর কাঁটা মুন্ডু ও বোটি রেখে
দেয়।
রক্তে টেবিল ভেসে গিয়ে নীচের দিকে গড়াতে থাকে। কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে দুই হাত
উপরের দিকে তুলে , পিছন ঘুরে জোরে আঘাত করে বিপরীত দিকে পাশের দোয়ালে।
আর সঙ্গে সঙ্গে হাতের শাঁখা পলা ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়ে বলে :- আমাকে গ্রেপ্তার
করুন, আমি স্বামী কে খুন করে তার রক্তে হোলি ও মুন্ডু দিয়ে ফুটবল খেলা করতে
করতে বিধবা হয়েছি।
হঠাৎ করে ভয়ানক এমন পরিস্থিতির জন্য থানার কোন পুলিশ প্রস্তুত ছিলেন না, সবাই
আতঙ্কিত হয়ে ভয়ে ভয়ে একদম চুপচাপ হয়ে যায়। পুলিশরা কর্তব্য বিমুখ হয়ে
ভাবতে থাকে আর একে অন্যের মুখের দিকে তাকিয়ে চাওয়া-চাওয়ি করতে থাকে।
বয়স্ক থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার দূর থেকে এই দৃশ্য দেখে ছুটেতে ছুটতে
লীলাবতীর কাছে আসে এবং দুরত্ব বজায় রেখে হাতজোড় করে বলে :- মা শান্ত হও;
তোমার সব কথা শুনবে ও অপরাধীর অবশ্যই সাজা পাবে।
লীলাবতী দুই হাত দিয়ে বুক চেপে ধরে, টেবিলের এক কোনায় গিয়ে মেঝেতেই বসে
পড়ে ।
ভারপ্রাপ্ত অফিসার মহিলা পুলিশদের বলেন :- তাড়াতাড়ি ঐ মেয়ে টি কে ভিতরে
নিয়ে গিয়ে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে স্নান করান ও উত্তেজিত ভাবে কথাবার্তা
বলবেন না এবং কাপড় পরিয়ে- আমার কাছে নিয়ে আসুন।
সেই মুহূর্তে পাড়ার কয়েক জন পুরুষরা থানার মধ্যে এসে বলেন :- স্যার, দুই টো
খুন হয়েছে আর একটা হাসপাতালে নিয়ে গেলে হয়তো বেঁচে যাবে। শয়তান টা এখনি
গ্রেফতার করুন।
অফিসারের নির্দেশে পুলিশ বাহিনী ছুটে চলে নীলাবতীর বাড়ির উদ্দেশ্যে, সঙ্গে
প্রতিবেশী লোকজন।
কয়েক ঘণ্টা পরে পুলিশ কর্মকর্তা লীলাবতী কে পাশে বসিয়ে বলে :- বলে মা, কেন
খুন করলে স্বামী কে ?
লীলাবতী বলে :- দুই বছর আগে-উভয় পক্ষের অভিভাবকেরা দেখাশোনা করার মাধ্যমে,
আমাদের বিয়ে হয়েছিল।
বিয়ের পর জানতে পারি মদ আর জুয়া খেলা ছাড়া -আমার স্বামীর দ্বিতীয় কোন কাজ
নেই।
অনেক দিন ধরে চেষ্টা করতে করতে একে একে আমার বাবার বাড়ি থেকে দেওয়া সোনা
গয়না ও টাকা-পয়সা ও বাসন-কোসন সবকিছুই মদের পিছনে চলে গিয়েছে, তবুও সংসারের
হাল ছাড়িনি।
একসময় সংসারে ও অনটন শুরু হয়- নিম্নতম চাহিদা দুটি লবণ ভাত জোটে না।
লজ্জা ঘৃনা ত্যাগ করে বাবার কাছে থেকে টাকা নিয়ে সেলাই মেশিনের কাজ শুরু করি।
মাঝেমধ্যেই স্বামীর মদের টাকার চাহিদা মেটাতে হতো।
একটা মেশিন থেকে আয় রোজগার করতে করতে আরও তিনটি মেশিন কিনে লোকের মাধ্যমে
কিছু বাড়তি রোজগার শুরু করি।
আমার আয়-রোজগার দেখে স্বামী হিংসা হতে শুরু করে এবং বন্ধুদের কথা মতো বাড়িতে
মদের ও জুয়া খেলার আসর বসিয়ে দেয় এবং আমার প্রতি নির্যাতন-অত্যাচার শুরু
করে দেয়।
এক দিন রাতে জুয়া খেলায় হারতে হারতে কয়েক হাজার টাকা হেরে যায় এবং আমাকে
বাজী রাখে।
কিন্তু বন্ধুদের চক্রান্ত এবার গোহারা হেরে যায়।
বন্ধুদের শর্ত অনুসারে-স্বামীর সামনেই, স্বামীর দুই বন্ধু-আমাকে জড়িয়ে ধরে
ধর্ষণ করার চেষ্টা করে কিন্তু তাদের ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় এবং ঘরের দরজা
ভিতর থেকে বন্ধ করে রাখি।
আজকের রাতে আমি মেশিনে কাজ শেষ করার পর -খাওয়া দাওয়া করে শোওয়ার জন্য, ঘরে
যেতেই উক্ত দুই বন্ধু মিলে জোর করে বিছানায় নিয়ে যায় এবং বিবস্ত্র করে
ধর্ষণের চেষ্টা চালিয়ে যায়।
আমি ধর্ষকের কাছে ধর্ষণের শিকার হয়ে পড়ি।
উপায় অন্ত না পেয়ে- হাতের কাছে চাকু পেয়ে যায়।
আগে পিছে কোন চিন্তা না করেই চাকু চালিয়ে দেয়।
চিৎকার করে নীচেই পড়ে যায়- তখন ক্রোধিত হয়ে পুরুষ অঙ্গ কেটে দেয় এবং
দ্বিতীয় বন্ধু কে ধরার জন্য তাড়া করে গেটের সামনে এসে জানতে পারি, আমার
স্বামী মদের নেশায় দশ হাজার টাকার বিনিময়ে - আমাকে ধর্ষণ করার অনুমতি
দিয়েছেন এবং নিরাপত্তার জন্য, নিজে গেটে বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে অপেক্ষা
করছো।
আমি স্বামীর দুই নম্বর বন্ধু কে খুন করার জন্য,বোটি দিয়ে গাঁয়ের সর্ব শক্তি
দিয়ে জোরে কোপ বসিয়ে দেয়।
আর সেই মুহূর্তে স্বামী গেট খুলে মাথা ভিতরে দিয়ে পরিস্থিতি জানার চেষ্টা করে।
স্বামীর দু'নম্বর বন্ধু বসে পড়ে আর স্বামীর গলায় গিয়ে কোপ লেগে ধর থেকে
মাথা আলাদা হয়ে পড়ে।
থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসারের সবকিছু শোনার পর লীলাবতী কে খুনের দায়ে গ্রেপ্তার
করে এবং লীলাবতীর স্বামীর দুই নম্বর বন্ধু কে গ্রেপ্তার করে মামলা দায়ের করেন।