ভালোবাসার বয়স ~✍️অনাদি মুখার্জি |Bhalobashar boyes (bangla-Kahini) - by anadi mukharjee

ভালোবাসার বয়স 

~✍️অনাদি মুখার্জি 


আকাশ টা আজ বড্ড অভিমানী ,সেই তার অভিমানের জানান দিচ্ছে অঝোর ধারা বৃষ্টিতে ! 
৭২ বছরের বৃদ্ধ রাকেশ তাই আজ ঘরবন্দি হয়ে আছে ,তার জীবনের রুটিন টা আজ যেন এক অন্য রকম হয়ে গেল ! রাকেশ যখন সরকারি কর্মকর্তা ছিলো তখন শুধু সেই কাজ ছাড়া আর কিছুই খবর রাখতো না ! ঘন্টা পর ঘন্টা বাইরে থাকতে শিখেছে ! কিন্তু আজ তাকে বাড়িতে থাকতে হচ্ছে এই বৃষ্টির জন্য ! তবে তার বই পড়ার নেশা আছে তাই রাকেশ বাবু তার পুরোনো বই গুলো বের করতে গিয়ে একটা লাল রঙের ডায়েরি পান ,সেই ডায়েরি পাতা খুলে দেখে বহু পুরোনো শুকিয়ে যাওয়া গোলাপের পাপড়ি আছে ! সেটা দেখে অবাক হয়ে ভাবতে লাগলো কিন্তু কিছুই মনে করতে পারলো না ! পরের পাতা খুলে দেখে লেখা আছে কিছু মনের কথা ! সেই অবাক হয় তার ৫০ বছরের সঙ্গী তার বউ রিয়া ডায়েরি লেখে ! রিয়ার লেখা গুলো পড়ে রাকেশ বাবুর চোখের জল গড়িয়ে পড়ে ! রিয়া লিখেছে যে মানুষ টা সাথে আমার বিয়ে হয়ে আমি প্রথম শুশুর বাড়ি আসি ,সেই দিন আমার শাশুড়ি মা আমাকে সংসারে চাবি আমার হাতে তুলে দিয়েছে ! সেই দিন থেকে আমি সব দায়িত্ব পালন করেছি ! স্বামী  কে ঠিক টাইম মতোন খাবার দিয়েছি ,শশুর ও শাশুড়ি সেবা করেছি ,ছেলে কে মানুষ করে তার বিয়েও দিয়েছি ! কিন্তু যে মানুষ টা জন্য এত করলাম তার বুক ভরা ভালোবাসা যেন আজো ও আমি পেলাম না ! মনে হয় কোথাও যেন অপূর্ণ থেকে গেলো ! জানি না আমি সেই মানুষটি বুক ভরা ভালোবাসা ! 
আমি সব পেয়েছি গাড়ি বাড়ি টাকা কিন্তু এইগুলো কি ভালোবাসা হলো ,প্ৰতিটি বউ চাই তার স্বামীর সাথে একটু কথা বলি ,একটু কোথাও বাইরে ঘুরতে নিয়ে যাওয়া ! সত্যিই এই  দুঃখটা রয়ে গেলো ! 
ঘন্টা খানেক পর রিয়া এসে তার স্বামী কে খাবারের জন্য ডাকতে গিয়ে তার হাতে লাল ডায়েরি টা চোখে পড়ে ,হাত থেকে নিয়ে বলে তুমি বুঝি আমার ডায়েরি লেখা গুলো পড়েছো ! রাকেশ তার বউ রিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখে ,রিয়ার ও মাথার চুল গুলো সামান্য পাঁক ধরেছে ,কিন্তু এই পাঁকা চুলের মাঝে লাল রঙের সিঁদুর টা টকটকে লাল হয়ে যেন এক রূপসী লাগছে ! রাকেশ হাসতে হাসতে রিয়ার কথার জবাব দিলো ! বললো জীবনের শেষ প্রান্তে এসে পড়েছি আর কি নতুন করে পড়বো তবে তোমার লেখা খুব সুন্দর নাও তোমার ডায়েরি ! রিয়া রাকেশ বাবু হাত ধরে খাবারের জায়গায় নিয়ে গেলো ! ডাইনিং টেবিলে বসে ছেলে ও বউমা কে বললো ! শোনো বউমা আমি আর তোমার শাশুড়ি মা কিছু দিনের জন্য বাইরে যাবো ! তার একমাত্র ছেলে সৌরভ তখন তার বাবাকে বললো ,কোথায় যাবে বাবা কিছু ঠিক করেছো ? রাকেশ বাবু বললো ভাবছি সমুদ্র সৈকত ধারে যাবো ! এই কথা শুনে রিয়া অবাক হয়ে উঠে ! 
বিকেলে রিয়া চা তৈরী করে তার স্বামী হাতে দিয়ে দেখে আজ তার স্বামী  কে বেশ  হ্যান্ডসাম লাগছে ! কতদিন পর নীল রঙের টিশার্ট পরে আছে ! রাকেশ বাবু সব চুল গুলো সাদা হয়ে গেছে তবুও আজ একটু অন্য রকম লাগছে ! রিয়া হাসতে হাসতে বললো তার স্বামী কে ,কি গো মনে হয় তোমার বসন্তের হাওয়া লেগেছে ! রাকেশ বাবু তার মোটা ফ্রেমের চশমা খুলে বললো , জীবনের ৭২ টি বসন্ত পেরিয়ে এলাম হয়তো ঝরা পাতার মতোন ঝরে পড়বো তাই একটু বসন্তের ছোঁয়া পেতে চাই ! রিয়া খানিক টা অবাক হয় !তার পর রাকেশ বাবু তার বউ কে বলে  তোমার ডায়েরি শেষ দুটো পাতা খালি ছিল ওতে আমি লিখেছি তুমি যদি পারো পড়ে নিও !
বৃদ্ধ বয়সে তোমার শরীরের কোনো আবেদন থাকবে না ,তখন আমি তোমার পাশে এসে ভালোবাসা দাবী নিয়ে বুঝিয়ে দেব যে ভালোবাসা শুধু শরীর থাকে না ,ভালো বাসা থাকে মনের ভেতরে সেই গোপনে ,
আজ তুমি বৃদ্ধা হয়েছো বলে তোমার চামড়া ঝুলে গেছে সেই চামড়ায় চুমু খেয়ে বুঝিয়ে দেব বয়স বাড়লেই অনুভূতি বদলায় না ! ভালোবাসার অনুভূতি গুলো থাকে চিরযৌবনা ! মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তোমাকে ভালোবেসে দেখিয়ে দেব তুমি আমার জীবনের কতটা প্রয়জনীয় ! আজ আমি যা হয়েছি শুধু তোমার জন‍্য ই !
ঠিক যেমন টা তুমি আমাকে মনে রেখেছো গোলাপ ফুল টা তুমি এখনো রেখেছো ডায়েরি পাতায় আর আমি তোমাকে রেখেছি আমার মনের অন্তরে !
রাতে এসে রিয়া তার ডায়েরি শেষ পাতায় তার স্বামী লেখা পড়ে অবাক হয় !
রাতের খাবার খেয়ে রাকেশ তখন তার বেডরুমে আসে ,দেখে রিয়াকে বেশ সুন্দর লাগছে ,পরনে ছিল নীল রঙের জামদানি শাড়ি মুখ খানা বেশ সুন্দর লাগছে ! কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিল রিয়ার দিকে ! রিয়া তখন বললো কি দেখছো , রাকেশ বললো মনে হয় আমার কাছে যেন আজ বসন্ত নতুন করে এসেছে ! চলো একটা সেলফি তুলি তোমাতে আমাতে ! রিয়া তার স্বামী কাছে এসে বললো কি হবে ফোটো তুলে ,জানো সব থেকে বড়ো ক‍্যামেরা কোনটি চোখ যে চোখে দেখি আমি সকাল সন্ধ্যা ! মন হলো সব থেকে বড়ো  এলবাম যেখানে তুমি আছো বিরাজ হয়ে ! রাকেশ তখন রিয়া কে কাছে টেনে বললো সমুদ্র ধারে যাবে তো ! আমরা বেরিয়ে পড়বো ঘুরবো কত আনন্দ করবো বলো তাই না ! 

আকাশ থেকে অঝোর ধারায় বৃষ্টি এখনো পড়ছে দেখছো রিয়া বললো  ,রাকেশ রিয়া কে জড়িয়ে ধরে বললো চলো না আমরা ভিজি সেই বৃষ্টি তে ! যেখানে আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিল ! আজ না হয় আমার তোমার বয়স কমে গেছে এই ভেবে এসো গো আমার বুকে ! রিয়া তখন তার স্বামীর বুকে মাথা রেখে বললো সত্যিই ভালোবাসার কোনো বয়স নেই , ভালোবাসা হলো চিরযৌবনা !

🌺🌺 সবাই জানাবেন লেখা কেমন লাগলো?🙂🙂 🌻🌻 লেখা ভালো লাগলে লাইক করুন আর নিজের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন 🙏🌹 💐🙏ধন্যবাদ 🙏🌼।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন