সাইবেরিয়ার পাখি আফ্রিকার মাটি ~ ডঃ অরুণ চক্রবর্তী | Syberiar pakhi Africar maati ~ Dr. Arun Chakraborty

...... সাইবেরিয়ার পাখি......

.......আফ্রিকার মাটি...... 

( কাহিনী কবিতা )            

ডঃ অরুণ চক্রবর্তী


উড়ে যায়, দল বেঁধে, দূরে, বহুদূরে; অসীম নীল আকাশের ছায়ায়! দূর সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া হয়ে, হিমালয় শৈলশিখর এড়িয়ে, তীব্র, হাওয়ায় দোল খেয়ে, সুনীল ভারত মহা-সাগর পেরিয়ে! ঘন সবুজ, দিগন্ত ছড়ানো, কত রং বাহারে ভরা, বিস্ময়, রোমাঞ্চে মোড়া, আফ্রিকা! ধীরে ধীরে নেমে আসে, হলুদ সাদা, তুষারের দেশের, হাজার হাঁসের দল, কেউ ভাসে উগ্যান্ডা লেকে, কেউ ঠোঁট ডোবায় ট্যাঙ্গানিকা হ্রদে! এই আনত মহাদেশীয় পক্ষীর দল, কথা বলে আফ্রিকান লাল পেলিক্যান, দল কে দল ফ্লেমিংগো দের স্নেহ আহ্বানে। ক্যানাডিয়ান গ্রেট গুজ দের, আকাশ আঁধার করা, ঋতু পরিবর্তন হেতু, আজীবন বাঁক নিয়ে জিব্রালটার হয়ে যাতায়াত, আফ্রিকার শত শত বালিহাঁসের ভিড়ে, খুঁজে নেয়; নির্ভুল বিশ্বাসে, সোমালীয় নিষ্ঠুর শিকারী চিল! শিকার ধরার প্রয়াসে! তাক্ করে থাকে! কখন ধরবে চকিতে, প্রায় দশ কিলো মিষ্টি রক্ত মাংসের বাচ্চা পেলিক্যান টাকে। ঘুরছে চালাক্, চতুর শেয়াল, সহসা, ধরে ঘাড় মটকায়, আঠারো কিলোর বড় ফ্লেমিংগোর, আপন অসাবধানতার ফলে। মেঘ উঠলো কেঁপে, বৃষ্টি এলো ঝেঁপে, দেখা যায় না একটুও জল, শুধু ভর্তি; রং বেরংয়ের পালকে, লাখো পক্ষীর ঝলকে, মেতেছে, আন্তর্জাতিক পক্ষী সন্মেলন! পৃথিবীর পরিধি ঘুরে, নিরলস দিক্ নির্দেশে, এ পবনহংসরা, প্রতি ঋতু ভেদে, উড়ে উড়ে আসে, কাকলি; কুজনে ভরিয়ে, নিশ্চিন্ত অবসরে! মহাপক্ষী নয় এরা, কিউই বা ফিজেন্টও নয়! কিন্তু সাহসী আকাশ নাবিক, নিশ্চয়, চঞ্চল, লক্ষ্যে ধীর, স্থির! হাজার পাখি, ওড়ে সামরিক বিমানের নিয়ম কায়দায়! সামনের নেতা পাখি, পিছনে উড়ে যায়! পর্যবেক্ষণে নজর না হারায়! হোক যেমনই গগন ঢাকা তপনে বা তারায়! ওরা নিজেদের জগতে, শিক্ষিত ও প্রশিক্ষিত, প্রথমে সাইবেরিয়ার মাঠে ঘাটে, ওড়ে, পরে আমুর, ভলগা পারে; কিছুদিন ওস্তাদি করে; এবার পেরোয়, কাসপিয়ান হ্রদ, পরে পেরোয় পুষ্কর হ্রদ, ভারত! এবার হয় আফ্রিকা, নয়তো, পড়বে সাহসী পাখীদের ছোট্ট; জীবনে যবনিকা, কারণ, এবার, ঐ নীচে সুনীল জলধি, দিক্ চক্রবালে মেশা, ভয়াল সুন্দর ভারত মহাসাগর! উড়ে, উড়ে, বিধাতার নিয়মে, মেঘমালা আর সপ্ত কিরণে! ক্লান্তিহীন, শশী ভূষণে, হাজার প্রাণের সম্মেলনে, জটায়ু বংশদ্ভুত; সশক্ত অহমিকায়, দেখে ওরা আঁখি পটে, ক্রমশ বিদায় নেওয়া নীল-সাদা, ভারত মহাসাগরকে! দেখা দিচ্ছে, বহু দূর, নীচে, সুন্দরী আফ্রিকা! ধূসর ইতিহাসের নীল নদ! স্রোতস্বিনী, বহে চলা জামবেজীকে! আরো পরে, হাজার পাখীর দঙ্গল, দেখলে মাসাইমারা, সেরেঙ্গেটির মনোহারিনী জঙ্গল! কত হ্রদ, কত খাল, কত বিল, দূরে শুভ্র মুকুটিত, মাউন্ট কিলিমাঞ্জারো, হাসে হাসি; স্বপ্নীল! ওই ক্ষুদ্র হ্রদ, মাসাই বেসিন, রাতে; দিনে, ডাকে কাছে; ডানা ঝাপটায়, লক্ষ লক্ষ জানা, অজানা, মরশুমি পাখি, ওরা আছে আন্তর্জাতিক উড়ানে, অভিসারী, অভিবাসী, রাতে দিনে, ব্যস্ত শাবক জন্ম দানে! নীচে ওড়ে, অনেক নীচে, শিকারী শঙ্খচিল, নতুন খাবার এসেছে, দূর সাইবেরিয়া হতে! নিয়েছে উঠিয়ে; বুনোহাঁসকে, ক্ষুধিত ঠোঁটের ফাঁকে! পাখীরা একমাত্র, হৃদয় থেকেও হৃদয়হীন, চোখ তাদের জলবিন্দুহীন! জীবনে মরণে, রহে মোহে, রহে দোঁহে! মা প্রকৃতির, আশীর্বাদ লহে, নষ্ট নীড়ের, অভিসারিকায়, তাই ওরা বেদনাহীন! নিয়ে কাব্যিক শূন্যতা বুকে, মাইকেলএ্যাঞ্জেলোর দৃষ্টিতে, প্রতিটি খেচর, দেখে সুন্দর পৃথিবীকে! হাজারের দল হাজিরা দেয়, নদী আর হ্রদে, ছোট মাছ, শামুক, শ্যাওলা, খুঁজে বেড়ায় কুড়িয়ে খেতে! সময়ের কোলে জন্ম নেয়, শত শত শাবক শিশু, বাড়ন্ত ক্ষুধা, বাড়াতে শরীর, ফিরতি উড়ানে, আকাশে উড়বে; মাতৃ স্নেহের পিছু পিছু! আদিকালের মানুষ, ডিঙিয়েছে হিন্দুকুশ, সাহস করেছে এদেরই দেখে! লিখেছে নাম, অভিযাত্রীর সুনাম খাতায়, ঐশী, ঐক্য, প্রকৃতি প্রেমিক, এনেছে নৈকট্য, কাছাকাছি তাই এসেছে, মানুষপাখী, মহা সলিল অতিক্রমের; করেছে দৃঢ়প্রতিজ্ঞা, কর্তব্যে জুড়েছে নিষ্ঠা, মাটির মানুষ নিয়েছে পিছু, সরিয়ে অহমিকা, ছোট্ট পাখি গিয়েছে উড়ে, হয়ে সাগরিকা! মাটির মানুষ, দীর্ঘ সাগরের ঢেউয়ে, দাঁড় বেয়ে বেয়ে, জীবন-পণে, পা রাখে অজানা দেশে, মহাদেশে, নিজেকে করে বিপন্ন, অবসন্ন, ধুলিধূসর! চোখে চোখ রেখে জেনেছে; চিনেছে, বুঝেছে, বন্য আদিম, স্বপ্ন ছায়ার এ ধরণীরে! তাই আজ, মানুষে-পাখীতে, হয়েছে সমব্যথী, আদরে, অবসরে, পাশাপাশি!

(REGISTERED UNDER COPYRIGHT ACT)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন