চাকরিহীন যুবক
(কাহিনী কবিতা)
~ ডঃ অরুণ চক্রবর্তী
বেরিয়েছে, চাকরির খোঁজে, চিন্তায়, চোখে কালি, শার্ট-প্যান্ট-বেল্ট বেঁধে শীর্ণ শরীরে!
পকেটে কাঁপে ইনটারভিউ লেটার,
উত্তর থেকে, যেতে হবে প্রায় দক্ষিণে,
উঠেছে যুবক চক্র যানে, কাঠ ফাটা রোদে,
চৈতী দুপুরে, ঘামে ভেজা শরীরে, বার বার রাখে নজরে; কাগজ পত্র, তার শিক্ষার পরিমাপ! হারিয়েছে যদি, বাঁচা না বাঁচা, জীবন,
জুড়ে হবে যে ব্রজপাত!
যাই হোক শেষে, পৌঁছে অবশেষে, অফিসে, আরদালীর সাথে গিয়ে, বলে, মে আই কাম ইন স্যর? উত্তর আসে, কাম ইন; কাম ইন!
চোখে বড় আশা, বুকে ক্ষীণ বল্, বসে পড়ে ঈশারাতে; কন্ কনে্ এসি,
কানে বলে যায়; সব ঠিক, সব ঠিক!
কোম্পানী, জনসন এন্ড নিকলসন!
পৃথিবীর এক নম্বর রংয়ের কারবারি;
বোর্ড বসেছে, প্রার্থী তালিকা নিয়ে, যুবক জানে, ফিরেছে অনেক, কেঁদে ব্যর্থ অন্ধকারে!
শান্ত গলায়, জিজ্ঞাসে, হোয়াট ইউর
ফাদার ডাজ? কাঁপা উত্তর ফিরিয়ে দিতে,
ফল্ট হতে হতে বাঁচে!
হি ওয়জ আ ফোরম্যান, বার্ণ স্ট্যান্ডার্ড,
ফের প্রশ্ন, ও! আই সি!
ওয়াট মেড ইউ টু অ্যাপলাই হিয়ার?
উত্তর যায়, একটু থিতু মনে হয়, স্যর,
ইট ম্যাচেস্, মাই ট্রেনিং এন্ড কোয়ালিফিকেশন, প্রশ্ন আবার, কাগজে চোখ বুলিয়ে, যদি চাকরী চাও, পাঁচ বছরের বন্ডে মুচলেকা দাও,
মানে দাঁড়ায়, হাজার ভালো চাকরী এলেও,
পারবে না ছাড়তে, ওরাও বা ছাড়াতে!
যুবক চুপ, নিরুত্তর, মনে মনে চলে হিসেব,
এতো ফাঁদ! আমার কি লাভ, কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং করে? কে এক, বলেছে ওকে,
বাজারে অনেক কাজ! লালমুখো সাহেব,
তখনও আছে তাকিয়ে! শেষে কল দিলেন;
নেক্সট! পাশে বসা বাঙালী ডিরেক্টর;
বললেন, মৃদু হেসে, “চাকরিটা খোয়ালে!”
কি আর করা, উঠতেই হলো অবশেষে,
যুবক হতোদ্যম, সাহেব দেখেন নীল চোখে।
দরিদ্র বিদ্বান, ভুল কিছু একটা হয়েছে,
শুধরে নিতে, ফিরতে চায়, ইতস্ততে, মে আই,
শক্ত চোয়ালে; সাহেব বলে, নো প্লেস ফর ইউ! থ্যাংক ইউ! কি করা যায়! কি করা যায়!
ভেবে ভেবে বসে, জীবনদীপের,
বাস স্ট্যান্ডে। ক্ষিদে বলছে, দাও খেতে, বাপ! সাকুল্যে ১৫ টাকা পকেটে!
তাও মায়ের আয়ার কাজের টাকা!
তবু এগোয়, কনক বিল্ডিংয়ের সামনে বসে,
হকার বাদাম ভাজে! একশ বাদাম কত গো,
শোনে দাম, পুরো একশো গ্রাম দশ টাকা, ওরে, বাবা! বাদামওয়ালা বলে, ঠিকবা। পরের ইনটারভিউ, পার্ক স্ট্রিটে, শীর্ণ যুবক চলে,
পা টেনে, টেনে, প্রচন্ড চৈত্রের দাবদাহে, কালো শরীর হয় আরো কালো! ভিজে গেলো কিছু না পাওয়ার হতাশায় আর কিছুটা প্রকৃতির নিয়মে।
লক্ষ্য এবার ব্রিটিশ পেনটস্!
কথা মতো, ঠিক চারটেয়, ৩ তলায়
সেমিনার হলে, হচ্ছে ইনটারভিউ,
বেল বাজাচ্ছে আর চাকুরী প্রার্থীরা; আসছে,
যাচ্ছে, হাসিমুখ, খুবই কম! এলো অবশেষে, ক্ষীণকায় যুবকের ডাক, উৎকন্ঠার শেষে!
আবার গতে ধরা, মে আই কাম ইন....ইয়েস, ইয়েস!
এ বোর্ডেও বিদেশি, স্বদেশি মিলে,
গোটা পাঁচ জন! প্রশ্ন, ইউ পাসড্ ইঞ্জিনিয়ারিং
ইন 1980- বাট নো ওয়ার্ক এক্সপিরিয়ান্স,
এ্যাজ ইয়েট! ওয়াট আর ইউ ডুয়িং ইনফ্যাকট্?
প্রথম প্রশ্নেই, যীশু বিদ্ধ! আর এগোয় না, ইনটারভিউ, একথা, ওকথা সামান্য!
এখানেও সাহেব বললেন অন্যদের,
ইউ মে বি কল্ড লেটার।
যুবকের চিন্তার ভাঁজ কপালে,
কি বলবে, উদয়অস্ত ছুটে বেড়ানো মাকে?
মায়ের জানা চেনা, মানুষদের
সুপারিশে জুটেছিল চাকরির ইন্টারভিউগুলো!
হে যুবক, পেয়েছিলে, সুবর্ণ সুযোগ,
বিপ্লবী হতে গিয়ে, পারলে না থামাতে!
অনটন, অনশনের স্টীম রোলার!
বাঁচাতে মাকে, ইজ্জত বোনেদের,
লেগে পড়ো, আবার আবার; যে কোন,
জীবনদায়ী চাকরীর খোঁজে।।
(REGISTERED UNDER COPYRIGHT ACT)