সেই কথা টা আর বলা হলো না ~ অনাদি মুখার্জি | sei kotha ta ar bola holo na - Anadi Mukharjee

সেই কথা টা আর বলা হলো না

 ~ অনাদি মুখার্জি 


আকাশ তখন বি.এড পড়ছে, প্রতিদিনের মতো সে আজও কলেজে গেল ! কিছুক্ষণের মধ্যেই বাংলা ক্লাস শুরু, অপেক্ষায় আছে সবাই !
নির্ধারিত শিক্ষকের পরিবর্তে হঠাৎই কলেজের অধ্যক্ষ এক নতুন ম‍্যাডাম কে নিয়ে ক্লাসে প্রবেশ করলেন ! সবার সাথে বাংলা ক্লাসের নতুন ম‍্যাডাম কে পরিচয় করিয়ে দিয়ে  তিনি চলে গেলেন ! তখন ক্লাসের সবার নজর সুন্দরী আধুনিক স্মার্ট নতুন ম্যাডামের দিকে ! ম‍্যাডাম তার নিজের পরিচয় দিয়ে উপস্থিত সকল ছাত্রদের এক এক করে পরিচয় দিতে বললেন !
পরিচয় পর্ব শেষ হলে, তিনি আকাশ কে বললেন স্কুল ছুটির পর ও যেন তার সাথে দেখা করে ! তখন ক্লাসে সবার নজর আকাশের দিকে, এইদিকে আকাশ তখন টেনশন করছে সে কি কোনো অন‍্যায় করেছে নাকি ? এই ভাবনায় পরের  ক্লাস গুলো সে মনযোগী হতে পারলো না !
ছুটির শেষে ক্লাস থেকে বেরিয়ে ম্যাডামের সাথে দেখা করলো, ম‍্যাডাম বললো চলো রাস্তায় যেতে যেতে কথা বলি ! রাস্তায় যেতেই ম‍্যাডাম আকাশ কে বললো তোমাকে আমি চিনি, তুমি কি আমাকে চেন ? এই কথা শুনে আকাশের মনে পড়ছে না কিছুই, তবুও সে বললো হ্যাঁ !
অনেক কথাই হলো তাদের মধ্যে, শেষে ম‍্যাডাম আকাশ কে বললো কাল তুমি আমার সাথে টিফিন করবে ?
কথা মতোন পরের দিন ম‍্যাডেমের সাথে আকাশ টিফিন করলো !
এইভাবে চলতে থাকে একে অপরের গল্প, গল্পের মাধ্যমে তারা অনেক টা বন্ধুর মতোন হয়ে উঠলো ! ম্যাডামের নাম রিয়া, আকাশের সাথে গল্পের ছলে সে বললো তুমি আমাকে রিয়া বলে ডাকতে পারো ! কথাটা শুনে আকাশ বললো না আপনি আমাদের ক্লাস নেন, কি করে আপনার নাম ধরে ডাকি! রিয়া মুচকি হাসি দিয়ে বললো কেনো এই টা কি কোনো নিয়ম আছে, তাছাড়া তোমাকে আমার ভালো লাগে বুঝলে ! 
বাড়ির কাজের চাপে অনেক দিন পর আকাশ কলেজে এল ! এসে বন্ধুদের কাছে শুনলো, আজ  ম‍্যাডেমের এর ফেয়ার ওয়েল, তাই আজ কলেজ হবে না,আকাশ সেই কথা বিশ্বাস না করে পিয়নের কাছে জানতে চাইলো ! পিয়ন জানালো ম‍্যাডেমের ভালো একটা চাকরির অফার এসেছে ,তাই তিনি কলেজ ছেড়ে দিতে চাইছেন ! এই কথাটা শোনার পর আকাশের মন খুব খারাপ হতে লাগলো, সে ক্লাসের শেষ বেঞ্চে বসে ভাবতে লাগলো ম্যাডামের কথা ,ভাবতে গিয়ে চোখের জল এসে গেল ! ম‍্যাডাম কে সে আর দেখতে পাবে না, তার সেই মায়াবী হাসি আর দেখা যাবে না ! এক সময় পিয়ন তাকে খোঁজ করতে গিয়ে আকাশ কে দেখে বলে, ম‍্যাডাম তাকে একবার দেখা করতে বলেছে ! সাথে সাথেই আকাশের মন আনন্দে ভরে উঠলো, সে যখন গেল দেখা করতে রিয়া ম‍্যাডামের সাথে, ম‍্যাডাম তখন তার অফিস ঘরে একাই ছিল ! ম‍্যাডাম আকাশ কে দেখে বললো তুমি কান্নাকাটি করছো কেন ? ম‍্যাডাম তার ওড়না দিয়ে আকাশের চোখের জল মুছে দিয়ে বললো এই নাও আমার ফোন নাম্বার আর ঠিকানা, তোমার যখন ইচ্ছে হবে আমার সাথে ফোনে কথা বলো ! ম‍্যাডাম হেসে তার পর আকাশের হাতে একটা গোলাপ ফুল ও চকলেট দিয়ে বললো আমাকে মনে রেখো ! বলে আকাশ কে ম‍্যাডাম তার বুকের মধ্যেই জড়িয়ে ধরলো ! তখন আকাশের মনে এক দারুন অনুভূতি জাগলো, তার নাকের একটা মিষ্টি গন্ধ পেলো ম‍্যাডেমের শরীরের থেকে ! ম‍্যাডাম যে পারফিউম লাগিয়ে আছে তার একটা গন্ধ পেল আকাশ ! ম‍্যাডাম যখন অফিস ছেড়ে চলে গেল তখন আকাশ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো !
আকাশ ম‍্যাডেমের সাথে দেখা করার পর বেরিয়ে এসে পথে যেতে যেতে ভাবতে লাগলো, আজ কেন তার মনটা খুব খারাপ লাগছে ? কেউ যদি নিজের মতোন করে ভালোবাসে, সে যদি চলে যায় তখন তার ভালোবাসার অনুভূতি গুলো বোঝা যায় ! 
আকাশের মন কিছু দিন খুবই খারাপ লাগছিল !এই ভাবে কিছু দিন চলার পর আকাশ পড়াশোনা চাপে ম্যাডামের কথা ভুলে গেল, 
পড়াশোনা শেষ করে আকাশ চাকরি চেষ্টা করছে, বহু জায়গায় সে ইন্টারভিউ দিয়েছে, কিন্তু কোনো কাজের কাজ হয়নি! চার বছর বাদে একদিন আকাশ দমদম থেকে বাগুইহাটি ফিরছিলো বাসে করে, পাশের সিটে বসা এক ভদ্রলোকের সাথে পরিচয় হলো ! তার কথার মাধ্যমে জানতে পারলো ,ভদ্রলোক যে অফিসে কাজ করে তার বস হলো ঐ সুন্দরী রিয়া ম্যাডাম ! আকাশের তখন খুব ইচ্ছে হলো ওই ম্যাডামের সাথে দেখা করার ! আকাশের তখন সব মনে পড়ে গেল, ম‍্যাডামের সাথে টিফিন খাওয়া ও তার দেওয়া উপহার সেই গোলাপ ফুল টা ,যা আজও আকাশ তার ডায়েরী তে রেখেছে !
পরের দিন সে ওই অফিসে গেলো, ম‍্যাডাম কে দেখে আকাশের মনে একটা খুশির ছোঁয়া এলো ! ম‍্যাডাম ও আকাশ কে দেখে মিষ্টি হাসি হেসে বসতে বললো !
ম্যাডাম আকাশের কাছে জানতে চাইলো সে এখন কি করে ? জবাবে আকাশ বললো সে কাজের চেষ্টা করছে, কিন্তু এখনো পায়নি, ম‍্যাডাম বললো তুমি আমার অফিসে কাজ করতে পারো ! স্বপ্নেও ভাবেনি আকাশ এই রকম এত ভালো কাজ পাবে, তা আবার তার প্রিয় রিয়া ম‍্যাডেমের কাছে !  খুশিতে আকাশ তার হাত বাড়িয়ে ধন্যবাদ জানাতে গেল, সেই মুহূর্তে ম‍্যাডামও তার হাত বাড়িয়ে আকাশের হাতের উপর হাত রেখে বললো আমি সব সময় তোমার পাশে আছি ! আকাশ কাজ পাওয়ার পর ভাবলো ম‍্যাডাম কে একবার আই লাভ ইউ বলা ঠিক হবে কি না, এই সব ভেবে ম‍্যাডেমের দিকে তাকিয়ে, রিয়া ম্যাডামের ওই সুন্দর মিষ্টি মুখের হাসি দেখে আকাশ সব ভুলে গেল ! শুধু চোখ দিয়ে দেখে গেলো ওই সুন্দর মায়াবী মুখখানি তার মনের কথা আকাশের মনে থেকে গেল !
অফিসের কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পর আকাশ ও রিয়া ম‍্যাডাম অনেকক্ষণ গল্প করতে করতে তারা কোনো পার্কে গিয়ে বসতো আবার কখনো ফুচকা খেতে যেতো, এইভাবে তাদের দিন কেটে যেতে লাগলো ! একদিন ম‍্যাডাম আকাশকে জানতে চাইলো, তোমার কি কোনো ভালো জামা কাপড় নেই ? আকাশ বললো অনেক আছে। দেখো আকাশ যে তোমাকে প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসে তাকে কোনোভাবেই মিথ্যে কথা বলো না ! আকাশ চমকে গিয়ে জানতে চাইলো তার মতোন অপদার্থকে কে ভালোবাসবে ? রিয়া ম‍্যাডাম তাকে একটু ধাক্কা দিয়ে বলো ন‍্যাকা, আমি তোমাকে বিশ্বাস করি আর খুব ভালোবাসি এই কথা তুমি কি বুঝতে পারিনি ! চলো আমার সাথে। বলে কলকাতার ভালো কাপড়ের দোকান থেকে তিন সেট জামা ও প্যান্ট কিনে দিয়ে বললো, নিজেকে একটু স্মার্টলুকিং করে তোলো। 
আকাশ ম‍্যাডেমের এই কথা শুনে খুব হাসতে লাগলো, শেষে বললো আমি কার জন্য স্মার্ট  হবো ? আমাকে কে দেখবে ! রিয়া ম‍্যাডাম তার ভ্রু নাচিয়ে বললো কেনো গো আমি দেখতে চাই তুমি আমার প্রিয় বন্ধু ! এই কথা শুনে আকাশ ম‍্যাডেমের সুন্দর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলো এক দৃষ্টিতে ! ম‍্যাডাম বললো কি দেখছো এমন করে ? আকাশ বললো কিছু না জানো তোমার দেওয়া সেই গোলাপ ফুল টা এখনো রাখা আছে ডায়েরি পাতায় ! আকাশ মনে মনে ভাবলো রিয়া কে এই বার বলে ফেলি আই লাভ ইউ রিয়া , কিন্তু না তার সেই কথা মনে থেকে গেলো মুখে কিছু না বলে ম্যাডামের হাত ধরে রাস্তা পার হলো ! 
কিছু দিন পর আকাশের জন্মদিন এসে গেলো, সে তার জন্মদিনে শুধু ম‍্যাডাম কে নিমন্ত্রণ করলো আর তার সাথে বললো রিয়া আমি আজ তোমাকে আমার মনের কথা জানাতে চাই !
পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে শুনতে পেলো বাইরে কিসের কোলাহল হচ্ছে, জানলা দিয়ে উকি মেরে দেখে রাস্তার মোড়ে খুব ভিড়, সেই ভিড় ঠেলে ঢুকে দেখতে পেয়ে অবাক হয় ! সে দেখে একটা লাল স্কুটি, পাশে রিয়া ম‍্যাডাম পড়ে আছে আর মুখ ও মাথা থেকে রক্ত বের হচ্ছে ! সাথেই সাথে আকাশ ম‍্যাডাম কে হাসপাতালে নিয়ে গেল ! হাসপাতালে ডাক্তার তাকে বলরো সরি আকাশ খুব দেরি করে ফেলেছেন ! তোমার ম‍্যাডাম মারা গেছে ! তা শুনে আকাশের শরীর টা নিথর হয়ে গেল ! এমন সময় একজন একটা চিঠি দিল যা ম‍্যাডেমের ব‍্যাগের মধ্যেই ছিল ,চিঠি টা খুলে দেখে ম‍্যাডাম লিখেছে - 
"আমার প্রিয়, যে দিন তোমাকে প্রথম কলেজে দেখি সেই দিন তোমাকে আমার খুব ভালো লেগেছিল। তুমি আমার থেকে ছোটো তবুও জানি না কেন তোমাকে দেখলে আমি দুর্বল হয়ে পড়ি ! তোমাকে আমার অনুভূতি দিয়ে বোঝাতে চেয়েছি তোমাকে আমি ভালোবাসি ! আজ তোমার জন্ম দিন, জানি না তোমার মনের কথা আমাকে বলবে কি না, কিন্তু আজ আমি শুধু বলতে চাই আমি শুধু তোমার !" এই চিঠিটা পড়ে আকাশের দুই চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরতে লাগলো ! সত্যিই, যে কথা আকাশের বলার ছিল সেই কথা আর বলা হলো না, সেই কথাটা তার মনের মধ্যেই থেকে গেল !

🌺🌺 সবাই জানাবেন লেখা কেমন লাগলো?🙂🙂 🌻🌻 লেখা ভালো লাগলে লাইক করুন আর নিজের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন 🙏🌹 💐🙏ধন্যবাদ 🙏🌼।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন