নতুন বন্ধু
- পৌলমী নস্কর
“মা,এই পুরনো বাড়িতে আর তোমাকে থাকতে হবে না,একটা নতুন বাড়িতে নিয়ে যাবো, তুমি যাবে তো?” – অনিকেত।“তোদের ইচ্ছে হলে তোরা যা। জানিস বাবা আমি এতদিন এখানে ছিলাম, কিন্তু তাও এটা আমার কাছে পুরনো হয়নি রে।এই বসতভিটা ছেড়ে অন্য জায়গায় গিয়ে থাকতে আমার একদম ভালো লাগবে না।”- বৃদ্ধা সুতপা।
“তোমার ভালো লাগা খারাপ লাগা জানার দরকার নেই আমাদের। তোমাকে যেতে বলেছি মানে তুমি যাবে। আচ্ছা আমাদের প্রাইভেসি বলে কি কিছু নেই। সবসময় দেখো ছেলে-বৌমার মাঝে দেওয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। যত ঝামেলা, বিরক্তিকর! ”ঝাঁঝিয়ে ওঠে মণিষা।
“ঠিকাছে, আমি চলে যাব।”-চোখ দিয়ে জল ঝরছে সুতপার।
গাড়ি থেকে নেমে দেখল, তারা তাকে নতুন বাড়ি বলে বৃদ্ধাশ্রমে নিয়ে এসেছে। তবে সুতপা একটুও অবাক হয়নি, এছাড়া আর কিবা আশা করা যায় ওদের থেকে।
সুতপা বৃদ্ধাশ্রমে ঢুকে দেখল সেটা বৃদ্ধাশ্রম কম আর পাগলাগারদ বেশি মনে হচ্ছে। কারণ কত বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা পাগলের মতো আচরণ করছে, কেউ বলছে মেয়ে আসবে ঠিক আসবে, কেউ বলছে তার ছেলে তাকে নিতে আসবে।সবাই তাদের সন্তান দের পথ চেয়ে অপেক্ষায় দিন গুণছে।
সুতপাও ক’দিন ধরে এদের সাথে থেকে থেকে ডিপ্রেশনে চলে যাচ্ছিল।একা একা থাকত,বেশি কথা বলত না আর কাঁদতওনা।শুধু তার মৃত স্বামীর ছবি টা নিয়ে বসে থাকত।
সুতপা নিজের নিয়তিকে মেনে নিয়েছে এবং ভেবে দেখেছ এভাবে একঘরে বদ্ধ অবস্থায় থেকে থেকে একদিন হয়ত সেও অন্যদের মতো বদ্ধ উন্মাদ হয়ে যাবে।তাই একদিন বিকেলে সে ঘুরতে বেরল,জায়গা টা সে চেনেনা,একটু এগোতেই দেখল একটা মাঠ।কত ছেলে-মেয়ে খেলা করছে।তবে এতজনের মাঝে সুতপার নজর কাড়ল একটি ছোট্ট মেয়ে।মেয়ে টির বয়স সাত কি আট হবে।মেয়েটি গাছের তলায় বসে আছে চুপচাপ।
সুতপা – “ও খুকু, তুমি ওদের সাথে খেলছনা কেন?”
খুকু – “আমার হার্টে একটা ফুটো আছে, তাই খেলা বারণ।”
সুতপা – “বসে বসে খেলা যায় এমন একটা খেলা জানি আমি। তুমি খেলবে?”
খুকু খুব উৎসাহিত হয়ে – “কি খেলা গো দিদুন?”
দিদুন কথাটা শুনে সুতপার চোখে জল চলে এল।সে ভাবতে লাগল যে তার নাতি বা নাতনি থাকলে সেও হয়তো তাকে দিদুন বলে ডাকত।এসব ভেবেই বা আর কি হবে,তার ছেলে-বৌমাই কোনোদিনও আসবেনা তারসাথে দেখা করতে, আবার নাতি -নাতনি!
“ও দিদুন বলবে তো কি খেলা?”- বলে পাশ থেকে খুকু ঠেলা দিচ্ছে।
“হ্যাঁ, খেলাটা তোমায় শিখিয়ে দেব,তার আগে বল তোমার নাম কি?” – সুতপা।
“আমার নাম মিষ্টি।” – খুকু।
“তোমার নাম টা তোমার মতোই মিষ্টি। তা এই নাম টা কে দিয়েছে বাবা না মা?” – সুতপা।
“জানিনা কে দিয়েছে।আমার বাবা-মা নেই গো দিদুন।আমি ওই মাঠের ওপাশের অনাথ আশ্রমে থাকি।” – মিষ্টি।
খুকুর কথা শুনে খুব মায়া হল সুতপার।
“খেলাটার নাম হল ইকির মিকির চামচিকির।তোমার দুটো হাত রাখো ঘাসের ওপর, এই আমার হাতও রাখলাম। এবার একটা ছড়া আছে সেটা বলতে বলতে অন্য হাত দিয়ে এই হাতের আঙুল গুলো কে গুনতে হবে।যখন ছড়াটা বলা শেষ হবে তখন আমি যে হাত দিয়ে গুনছিলাম সেই হাত টা যে আঙুলে শেষ হবে সেই আঙুল টা মুড়ে নিতে হবে।”- সুতপা খুব ভালো করে খেলাটা বোঝাচ্ছে।
খুকুর উজ্জ্বল চোখ দেখে বোঝা গেল খেলাটা তার বেশ পচ্ছন্দ হয়েছে।
“এবার তোমায় ছড়াটা শেখাই –
“ইকির মিকির চাম চিকির
চামে কাটা মজুমদার
ধেয়ে এল জমিদার
জমিদারের হাঁড়িকুড়ি দুয়ারে বসে চাল কুটি
চাল কুটতে হল বেলা
ভাত খাবি সেই দুপুরবেলা
ভাতে পড়ল মাছি
কোদাল দিয়ে চাঁচি
কোদাল হল ভোঁতা
খেঁকশিয়ালের মাথা।”
“কি মজার ছড়া” – মিষ্টি।
এরকম ভাবেই রোজ বিকেলে দিদুন আর খুকুর দেখা হয়।ওরা ইকিরমিকির, লুডো,দাবা খেলে।দিদুন কতো গল্প বলে খুকুকে।
দুজনেই সারাটাদিন বিকেল হওয়ার অপেক্ষায় থাকে,আর বিকেল হলেই ছুটে চলে যায় সেই মাঠে।
সুতপার সাথে মিষ্টির বন্ধুত্ব হওয়ার পর সুতপা যেন জীবনে নতুন করে বাঁচার আশা খুঁজে পেল।মিষ্টিও তার এই নতুন বন্ধু টিকে পেয়ে খুব খুশি।
ওদের দুজনের বয়সের হয়তো অনেকটা পার্থক্য কিন্তু মনের দিক থেকে ওরা খুব কাছের। ওদের বন্ধুত্ব চির জীবী হোক ।
==============================
🌺🌺 সবাই জানাবেন গল্প কেমন লাগলো?🙂🙂 🌻🌻 গল্প ভালো লাগলে লাইক করুন আর নিজের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন 🙏🌹 💐🙏ধন্যবাদ 🙏🌼।
x
🌺🌺 সবাই জানাবেন গল্প কেমন লাগলো?🙂🙂 🌻🌻 গল্প ভালো লাগলে লাইক করুন আর নিজের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন 🙏🌹 💐🙏ধন্যবাদ 🙏🌼।
x
Tags:
Kahini/কাহিনী
